শনিবার, ১৬ ফেব্রুয়ারী ২০১৯, ১২:২৫ অপরাহ্ন
প্রতিদিন ডেস্ক::প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশের সংসদ নারীর ক্ষমতায়নের প্রতীক। বিশ্বশান্তি ও নারীর ক্ষমতায়নের ওপর ভিত্তি করেই বৈষম্যহীন, দারিদ্র্য ও সংঘাতমুক্ত সমাজ গড়ে তোলার লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ।
মঙ্গলবার স্থানীয় সময় সকালে লন্ডনের ওয়েস্ট মিনস্টারে রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ সম্মেলন কক্ষে কমনওয়েলথ নারী ফোরামের অধিবেশনে দেওয়া ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন।
‘এডুকেট টু এম্পাওয়ার : মেকিং ইকুইটেবল অ্যান্ড কোয়ালিটি প্রাইমারি এডুকেশন অ্যান্ড সেকেন্ডারি এডুকেশন এ রিয়েলিটি ফর গার্লস অ্যাক্রস দ্য কমনওয়েলথ’ শীর্ষক এ অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। অধিবেশনে অস্ট্রেলিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী জুলিয়া গিলার্ড উদ্বোধনী বক্তব্য দেন। সিয়েরা লিওনের প্রেসিডেন্ট ও যুক্তরাজ্যের আন্তর্জাতিক উন্নয়নবিষয়ক মন্ত্রীও এ সময় কথা বলেন।
২০ মিনিটের বক্তব্যে নারীর ক্ষমতায়ন ও শিক্ষায় বাংলাদেশের অগ্রগতি এবং তার সরকারের সময় নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, বাংলাদেশের সংসদ হচ্ছে দুনিয়ার একমাত্র সংসদ, যেখানে সংসদের স্পিকার, সংসদ নেতা ও উপনেতা এবং বিরোধীদলীয় নেতা সবাই নারী। আমাদের পুরুষ সদস্যরা খুবই উদার। তার এ বক্তব্যের সময় উপস্থিত ৫৩ জাতির কমনওয়েলথভুক্ত অন্য দেশগুলোর নেতারা করতালি দিয়ে তাকে স্বাগত জানান।
সংবিধানে নারী-পুরুষের সমানাধিকারের বিষয়টি একটি মৌলিক অধিকার হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা এমন একটি ভবিষ্যৎ দেখতে পাচ্ছি, যেখানে নারী ও পুরুষ হাতে হাত মিলিয়ে মানব উন্নয়নে কাজ করছে। যথাযথ শিক্ষা ছাড়া নারীর ক্ষমতায়ন সম্ভব নয় বলেও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। লিঙ্গ সমতায় দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ নেতৃস্থানীয় জায়গায় থাকার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের হিসাবে, ১৪৪টি দেশের মধ্যে নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশের অবস্থান ৪৭তম এবং দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম। নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে ১৫৫টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম।
বাংলাদেশে সশস্ত্র ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর মতো চ্যালেঞ্জিং পেশায় নারীর কাজ করার কথা উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, বিমান চালনা, সর্বোচ্চ আদালতের বিচারক, প্রশাসন, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, রাষ্ট্রদূতের মতো উচ্চ পদগুলোয় বাংলাদেশের নারীরা দক্ষতার সঙ্গে কাজ করছেন। বাংলাদেশের নারীদের জাতিসংঘ শান্তি মিশন, এভারেস্ট জয় ও দেশে-বিদেশে খেলাধুলায় সাফল্যের কথাও তুলে ধরেন তিনি। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে নারীদের ত্যাগ ও সংগ্রাম এবং যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ গঠনে নারীর উন্নয়নে বঙ্গবন্ধুর নেওয়া পদক্ষেপের কথা বর্ণনা করেন প্রধানমন্ত্রী।
নারী শিক্ষার প্রসারে তার সরকারের নেওয়া নানা কর্মসূচির কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত মেয়েদের শিক্ষা অবৈতনিক করা, ২৮ লাখের বেশি শিশুর জন্য স্কুল খাদ্য কর্মসূচি গ্রহণ, বিশ্বের সবচেয়ে বেশিসংখ্যক শিক্ষার্থীকে বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ করা, ২৩ লাখ শিক্ষার্থীকে উপবৃত্তি ও মেধাবৃত্তি দিচ্ছে সরকার। তিনি বলেন, বর্তমানে স্কুলে মেয়ে-ছেলে অনুপাত ৫৩ : ৪৭, যা ২০০৯ সালে ছিল ৩৫ :৬৫। গত নয় বছরে সাক্ষরতার হার ৪৫ থেকে বেড়ে ৭৩ শতাংশ হয়েছে। দেশের প্রাথমিক শিক্ষক পদের ৬০ ভাগ পদ নারীদের জন্য সংরক্ষিত। এ ছাড়া প্রত্যেক জেলায় তথ্যপ্রযুক্তিসহ নারীর ক্ষমতায়নে বিভিন্ন প্রকল্প চালু করা হয়েছে।
নারীর উন্নয়নে ২০১০ সালের নারী নীতি প্রণয়নের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী জানান, সংসদ ও স্থানীয় সরকারে তাদের জন্য সংরক্ষিত আসন রাখা হয়েছে। এ ছাড়া নারী উদ্যোক্তাদের জন্য বিনা জামানতে ঋণসহ নানা সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন সামাজিক প্রতিবন্ধকতা দূর ও গ্রামের নারীদের জীবনমান উন্নয়নে নারী শিক্ষা সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। পারিবারিক নির্যাতন ও শোষণের ঘটনা কমে গেছে। নারী শিক্ষার প্রসার ও অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন বাল্যবিয়ে কমাতেও ভূমিকা রাখবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
বাংলাদেশের অর্থনীতিতে নারীর অবদানের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, দুই কোটি নারী কৃষিকাজে এবং পোশাক শিল্পে ৪৫ লাখ চাকরিজীবীর ৮৫ শতাংশই নারী।
অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব নজিবুর রহমান, এসডিজিবিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদ, পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক ও প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম অংশ নেন।
কমনওয়েলথ সরকারপ্রধানদের বৈঠকে যোগ দিতে সোমবার রাতে লন্ডনে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিকেলে যুক্তরাজ্যের গবেষণা সংস্থা ওডিআই আয়োজিত ‘বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রগতি : নীতি, অগ্রগতি ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা ছিলেন তিনি। বুধবার এশীয় নেতাদের অংশগ্রহণে ‘ক্যান এশিয়া কিপ গ্রোয়িং?’ শীর্ষক একটি গোলটেবিল আলোচনায়ও যোগ দেবেন প্রধানমন্ত্রী। এ ছাড়া বিকেলে তিনি ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে আয়োজিত অভ্যর্থনা অনুষ্ঠান ও নৈশভোজে যোগ দেবেন।
বৃহস্পতিবার কমনওয়েলথ সরকারপ্রধানদের বৈঠকের উদ্বোধনী ও অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন শেখ হাসিনা।